আলমগীর মাহমুদ

আমরা সবাই পৃথিবীর ব্যবহারকারী, মালিক নই। হোটেল মোটেলে রাত্রিযাপনের মতই পৃথিবীকালীন বয়স আমাদের। রুম ভাড়ার মতো এখানেও আছে চেক ইন আউট সময়। তাও নির্ধারিত।

কথাটা সবাই জানি বুঝি, কিন্তু অন্তরের বিশ্বাসে খাঁটিই খাটি এভাবে পারিনি নিতে। আমার দাদার দাদা বলেছিল এই ঘর আমার। আমিও আজ বলছি একই কথা এই ঘর আমার।

সেদিনের সে আমার বলা জমিদার। দলিল আর খতিয়ান ছাড়া আজ কোথাও নেই তাঁর আস্তিত্ব। বংশ পরম্পরায় অচিন।

মানুষ মনে রাখে দাদা। বড়জোর দাদার বাপ পর্যন্ত।এর উপরের আত্মীয়তার খবর রয় c.s/ R.s..B.s খতিয়ানে অথবা দলিলে । এটিই মানব সমাজের একটি চলমান প্রক্রিয়া।

পৃথিবীটা রিলে রেস দৌড়ের কাঠির মতো। এটি এক প্রজন্মের ব্যবহারের পর অন্য প্রজন্মের হাতে দলীয় কাঠির মতোই আমরা পৌঁছে দিই।

যদি পৃথিবীটারে অসুস্থ করে প্রজন্মের হাতে তুলে দিয়ে যাই আমাদের কৃতকর্মের সব কূফলের বলি হয় দোষ না করা নিষ্কলুষ পরের সেই তারা।

মা, বাবার জমির ভাগের অংশীদার যেমন তারা বনে তেমনি অভিশাপেরও। কৃতকর্মের সুফল কূফলেরও।

অচেতন চিন্তার কারণে, অথবা ‘কূচ পরোয়া নেহি’ মানসিকতায় আমরা যে পৃথিবীরে অষ্টিওফরাসিস রোগী বানিয়ে হাড়ের শক্ততা ফুরফুরে করে অভিশপ্ত হচ্ছি দিনের পর দিন তাতেও নেই মালুম।

মসজিদ, মন্দিরে, জপমালায়, খুঁজছি স্বর্গ। অজান্তেও যদি কারো ভুলে ট্রিগারে টিপ পড়ে কেউ মার্ডার হয় এখানে ‘Sorry’ চলে না। সেও তখন রয় খুনির লিষ্টিতে।

মসজিদ মন্দিরে স্বর্গ স্বাদের যে আকুতি আমাদের তার বিশাল এক পাঠ যে রয়ে আছে প্রকৃতিও পৃথিবীর সুরক্ষায়। ব্যতিক্রমে পড়ছি পাপে। তাতে নিজেরাই আজ বেমালুম।

ফলে আমাদের স্বর্গ চিন্তা একটি পিচ্ছিল বাঁশে একটি বানর তিনফুট উঠলে দুইফুট নেমে যায় — পাটী গণিতের সে অঙ্কের মতোই যেন হয়ে আছে।

অনেকভাবেই প্রকৃতি আর পৃথিবী আমাদের ব্যবহারে অতিষ্ঠ। আমরাই করছি বাসযোগ্য পৃথিবীরে প্রতিশোধপ্রবণ। তারমধ্যে নিত্য যে ক্ষতি পলিথিন ব্যবহারে অসচেতনতায় ঘটিয়ে চলেছি। এই একটির প্রতিশোধের খেসারত দিতে গিয়েই আজ আমরা হিমসিমে।

বৃষ্টি হওনের আগেই নালা নর্দমা বন্ধ, ময়লা পানির প্রবাহ চলে কারো উঠান কারো পাকঘরে, অনেকের বেডরোমে, চাষের জমি পারছে না পলেথিনের অপচনের কারণে ফলন দিতে।

যেখানে সেখানে পানীয় পানে বোতলটি মারছি ছূঁড়ে,যদি তা নদীপথে ভ্রমণেও হয় ফেলছি নদীতে– সাগরে।

প্লাস্টিক দ্রব্য, বাজারের পলেথিন ছূঁড়ে মারার অপরাধে অপরাধী নয় এমন মানুষের অস্তিত্ব আজ অণুবীক্ষণ যন্ত্রে লাগবে খোঁজা।

ব্যাপক পরিসরের কথা বাদই দিলাম। আমরা যদি নিজেরাই নিজেরটা যাহ ব্যবহার করি তাহ একটা পলেথিনে জমিয়ে প্রতি সপ্তাহে অথবা অবসরে একটি ম্যাচের কাঠিতে জ্বালিয়ে অন্তত নিজের ক্ষতি থেকে পৃথিবীটারে রক্ষা করতাম!

পুণ্যের কাজ ভেবে পৃথিবী সুরক্ষায় ধর্মীয় বিধির চর্চা করতাম!

প্লাষ্ঠিকের করাল গ্রাসে ভয়াবহ আগামী পৃথিবীর বসবাসে যে অশনি সংকেত তাহ বুঝতাম!

জ্বালানি হবার আগেই যদি জ্বালাতাম…!

পৃথিবীটাও রইতো আমাদের…

লেখক: বিভাগীয় প্রধান সমাজবিজ্ঞান বিভাগ উখিয়া কলেজ কক্সবাজার।

alamgir83cox@gmail.com